Top

Welcome To Official Website Of Aid For Men

১৯শে নভেম্বর আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস

১৯শে নভেম্বর আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস

By: Shawon Ahmed (Desk) || Date: 19 Nov 20

১৯ নভেম্বর, আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস প্রথম প্রতিষ্ঠা করেন ড. জেরোম টিলাকসিং। তিনি ত্রিনিদাদ এন্ড টোবাগোতে অবস্থিত ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিষয়ের একজন প্রভাষক। মজার ব্যাপার হল, আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসের আহবান শুরু হয় ষাটের দশক থেকেই। নিউ ইয়র্ক টাইমসে ২৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৯ তারিখে একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, "অনেক পুরুষই ২৩ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস বানাতে ব্যক্তিগতভাবে উৎসুক, যা ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসের সমতুল্য।" নারীদের জন্য এই দিবসের উদ্বোধন হয় ১৯০৯ সালে। ১৯৬০ সাল থেকেই আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস সৃষ্টির জন্য লাগাতার আহবান করা হয় লিঙ্গ-সমতার পক্ষে প্রশ্ন তুলে যেমন, "নারীদের জন্য আন্তর্জাতিক দিবস উৎযাপিত হলে পুরুষদের জন্য নয় কেন?" সাথে এরকময় বলা হয় - "পুরুষের অবদান ও উদ্বেগসমূহ স্বমহিমাতেই স্বীকৃতির দাবি রাখে।" - শুধু নারী দিবসের তুলনা হিসেবে নয়। বিগত কয়েক দশকজুড়ে বেশ কিছু দেশে (যেমন কানাডা, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, কলম্বিয়া, রাশিয়া, চীন) পুরুষ দিবস প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করা হয়েছে এই আশায় যে এই দৃষ্টান্তগুলোর সাক্ষ্মী হবে অন্য দেশগুলো, যারা অনুপ্রাণিত হয়ে প্রতিষ্ঠাতাদের অনুসরণ করে পুরুষ দিবস উৎযাপন করবে। বেশ কিছু দেশে এরকম ক্ষুদ্র পরিসরের আয়োজন হলেও আন্তর্জাতিকভাবে আকর্ষণ সৃষ্টির মত পর্যাপ্ত প্রচারের অভাব ছিল, ফলে আর কোনও উদ্যোগ গৃহীত হয় নি। ৯০ দশকের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং অস্ট্রেলিয়ায় ফেব্রুয়ারিতে ক্ষুদ্র পরিসরে কিছু আয়োজন করা হয় অধ্যাপক থমাস ওস্টারের আহবানে, যিনি মিসৌরি সেন্টার ফর মেন'স, কানসাস সিটির পরিচালক। ১৯৯৪ সালে ওস্টার সফলভাবে এ আয়োজনকে প্রচার করেন, কিন্তু ১৯৯৫ সালের আয়োজনে তিনি তেমন সাড়া পাননি এবং ফলশ্রুতিতে পরবর্তী বছরগুলোতে তিনি আর এ নিয়ে কোনও পরিকল্পনা গ্রহণ করেন নি। ১৯ নভেম্বর, ২০০৩ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় এই দিবস পালন বন্ধ থাকলেও শুধুমাত্র মাল্টিজ এসোশিয়েশান ফর মেন'স রাইটস প্রতি বছর ফেব্রুয়ারিতে এই দিবস পালন করতে থাকে। ২০০৯ সাল পর্যন্ত বিশ্বে একমাত্র তারাই ফেব্রুয়ারীতে এই দিবস পালন করতো, পরে অস্ট্রেলীয় পুরুষ দিবস পালনকারীদের অনুরোধে দিবসটি ১৯ নভেম্বরে নিয়ে আসে। অস্ট্রেলিয়ান পুরুষ ও বাবাদের পক্ষবাদীরাই মূলত বর্তমান আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসের ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠাতাঃ internationalmensday.com অস্ট্রেলীয় পুরুষ দিবস আয়োজকগণ অন্যান্য কিছু দেশেও নভেম্বরে পুরুষ দিবস পালনকে নিয়মিত করেন, যার শুরু হয়েছিল ড. টিলাকসিং এর হাতে সেই ১৯৯৯ সালে। ২০০৮ সালে Dads4kids নামক সংগঠন কর্তৃক নিউ সাউথ ওয়েলস স্টেট পার্লামেন্টে পুরুষ দিবসের এক ঐতিহাসিক উৎযাপন আয়োজিত হয় এবং ২০১৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরার ফেডারেল পার্লামেন্টেও একইভাবে আয়োজন করা হয়। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসের এই আয়োজন, ভারতীয় পুরুষাধিকার কর্মী ও দুই সন্তানের জননী উমা চাল্লার কাছে অনেকটা ঋণী। তিনি তখনও জানতেন না যে এই দিবসের দিন-তারিখের উদ্ভব কীভাবে হল। কিন্তু তিনি বিশ্বাস করতেন যে এমন একটি দিবস উৎযাপন, পুরুষবিরোধী আইন ও বিচারব্যবস্থা কর্তৃক অভাবনীয় পুরুষ-শোষন ও পুরুষ নির্যাতনের নির্মম বাস্তবতাকে সামনে আনতে তাৎপর্যপূর্ণ। উমা চাল্লা ভেশ কিছু সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা, যার মধে অন্যতম হল ব্যাঙালোরভিত্তিক নন-প্রফিট 'সেইভ দ্য ইন্ডিয়ান ফ্যামিলি ফাউন্ডেশন'। তর্কসাপেক্ষে উমা চাল্লাকে ছেলেদের জন্য আন্তর্জাতিক দিবস পালনের অন্যতম ভিত্তিস্থাপক বলা যায়। এককভাবে ভারতে আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসের আয়োজন বিশ্বের অন্য যে কোন দেশের চেয়ে বৃহত্তর। আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসকে বৈশ্বিক পর্যায়ে নিয়ে বিশ্বজুড়ে পুরুষ অধিকার আন্দোলনকে ঐক্যবদ্ধ করতে Dads4kids এর প্রতিষ্ঠাতা ওয়ারউইক মার্শকে এই উমা চাল্লাই অনুপ্রাণিত করেছিলেন। আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসের উদ্দেশ্য তথা প্রতিপাদ্য বিষয়গুলো হল - পুরুষ ও ছেলে শিশুদের স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব দেয়া, নারী-পুরুষ সম্পর্কের উন্নতি, লিঙ্গ-সমতার প্রচার ও প্রসার করা এবং ইতিবাচক পুরুষ রোল-মডেল বা আদর্শের প্রতি আলোকপাত করা। এই দিবস এমন একটি সুযোগ বা উপলক্ষ্য হিসেবেও কাজ করে, যেখানে পুরুষেরা তাদের বিরুদ্ধে চলমান বৈষম্যসমূহের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারেন এবং সমাজ, কর্মস্থল, পরিবার, বন্ধুমহল, বৈবাহিক জীবন ও শিশুদের জন্য তাদের ইতিবাচক অর্জনগুলো উৎযাপন করতে পারেন। শুরুর দিকে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসের সমর্থনে যে জনমত তৈরি হয়েছিল, আজ তা আন্তর্জাতিক পরিসরে গিয়েছে। তাদের পথ অনুসরণ করে আজ সিংগাপুর, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ আফ্রিকা, হাইতি, জ্যামাইকা, হাংগেরি, মাল্টা, ঘানা, মলদোভা ও কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস উৎযাপিত হচ্ছে এবং ক্রমশই এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। ১৯৯৯ সাল থেকেই আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসের স্মরণে উপহার প্রদান, গণ-সেমিনার, মতবিনিময়সভা, আলোচনাসভা, বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষ কার্যক্রম, পুরুষের স্বাস্থ্যবিষয়ক ইভেন্ট, 'মভেম্বার' তহবিল, বেতার ও টেলিভিশন অনুষ্ঠান, সংসদীয় বক্তৃতা, সরকারী আয়োজন, চার্চভিত্তিক আয়োজন, শান্তিসভা ও মিছিল, পুরস্কার বিতরণী, পণ্যদ্রব্যের বিশেষ মূল্যছাড়, মিউজিক কনসার্ট এবং শিল্পকলা প্রদর্শনীর আয়োজন করা হচ্ছে। এই দিবস পালনের পন্থা ঐচ্ছিক, যে কোনও সংগঠন নিজেদের মত অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারে এবং যেকোন উপযুক্ত জনগোষ্ঠী এখানে অংশ নিতে পারে। আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসের ভিত্তিস্থাপনকারীরা সবাইকে এটাই মনে করিয়ে দিতে চান যে, আন্তর্জাতিক নারী দিবসের সাথে প্রতিযোগিতা করা এই দিবসের উদ্দেশ্য নয়, বরং পুরুষদের জীবন ও অভিজ্ঞতার প্রতি আলোকপাত করাই এর উদ্দেশ্য। প্রতিবছর এই দিবসের বিভিন্ন প্রতিপাদ্য থাকে যেমন ২০০২ সালে 'শান্তি', ২০০৩ সালে 'পুরুষের স্বাস্থ্য', ২০০৭ সালে 'নিজেকে গড়ে তোলা ও ক্ষমাশীলতা' বা ২০১০ সালে 'ইতিবাচক পুরুষাদর্শ'। ২০১০ সালের প্রতিপাদ্য ছিল "আমাদের শিশুরা আমাদের ভবিষ্যত"। উইকিপিডিয়ায় এই প্রতিপাদ্য বিষয়সমূহের পূর্ণ তালিকা পাওয়া যাবে।