Top

Welcome To Official Website Of Aid For Men

আইন ও পুরুষ ধর্ষন

আইন ও পুরুষ ধর্ষন

By: Shawon Ahmed (Desk) || Date: 18 Oct 20

ধর্ষণ
তামাম অপরাধসমূহের মধ্যে নিঃসন্দেহে জঘন্যতম এক অপরাধ এটি। সোজা ভাষায় 'ধর্ষণ' হলো মূলত এক ধরনের যৌন আক্রমণ। সাধারণত, একজন ব্যক্তির অনুমতি ব্যতিরেকে তার সঙ্গে যৌনসঙ্গম বা অন্য কোনো ধরনের যৌন অনুপ্রবেশ ঘটানোকে ধর্ষণ বলা হয়। ধর্ষণ শারীরিক বলপ্রয়োগ, অন্যভাবে চাপ প্রদান কিংবা কর্তৃত্বের অপব্যবহারের মাধ্যমে সংঘটিত হতে পারে। অনুমতি প্রদানে অক্ষম (যেমন- কোনো অজ্ঞান, বিকলাঙ্গ, মানসিক প্রতিবন্ধী কিংবা অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি) এরকম কোনো ব্যক্তির সঙ্গে যৌনমিলনে লিপ্ত হওয়াও ধর্ষণের আওতাভুক্ত।

তবে ধর্ষণের আইনটি কিন্তু লিঙ্গনিরপেক্ষ নয়!
হ্যাঁ বাংলাদেশের আইনে নারী ধর্ষণের সংজ্ঞা দেওয়া থাকলেও পুরুষ ধর্ষণের সুস্পষ্ট কোন আইন ও সংজ্ঞা নেই।
পুরুষ ধর্ষন!! কথাটা শুনে হয়তো আপনি অবাক হন!! ভাবেন পুরুষ আবার কি ভাবে ধর্ষন হয়?
এবার আসছি পুরুষ ধর্ষণের বিষয়ে।
অনেকরই বদ্ধমূল ধারনা যে,
পুরুষদের কি 'ধর্ষণ' করা যায়? তাকে কি জোর করে উত্তেজিত করা সম্ভব - যাতে যৌন মিলন ঘটতে পারে?

গবেষকরা এখন বলছেন:ধর্ষণ করার সক্ষমতা নারীর এবং পুরুষের উভয়েরই আছে। কিন্তু ধর্ষক শব্দটা শুধুমাত্র পুরুষের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় পুরুষবিদ্বেষী মানসিকতার কারণে।

আর ব্রিটিশ বিজ্ঞানী ডক্টর সিওভান উইয়ারের, ফোর্সড-টু-পেনিট্রেড ( নারীকর্তৃক পুরুষ ধর্ষণ) নিয়ে করা একটি গবেষণারয় দেখা যায়,
পুরুষ ধর্ষন অসম্ভব নয়, বরং অসম্ভব মনে করাটাই একটা 'মিথ' বা 'কাল্পনিক উপকথা'।


নারী যদি পুরুষকে যৌনমিলনে বাধ্য করে - তাকে কি ধর্ষণ বলা যায়? শিরনামে বিবিসি তে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে
ব্রিটেনের ল্যাংকাস্টার ইউনিভার্সিটি ল' স্কুলের ড. সিওভান উইয়ার ২০১৬-১৭ সালে যুক্তরাজ্যে 'একজন পুরুষকে জোরপূর্বক যৌনমিলনে বাধ্য করার' ওপর প্রথম যে গবেষণা পরিচালিত হয় তার কিছু তথ্যের প্রকাশ করেন।

একজন পুরুষ যদি একজন নারীকে জোর করে তার সাথে যৌনমিলন করতে বাধ্য করে তাকে ধর্ষণ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু যদি একজন নারী একজন পুরুষকে জোর করে তার সাথে যৌন মিলন করতে বাধ্য করে - তাহলে সেটাও কি ধর্ষণের পর্যায়ে পড়বে কিনা সেই ব্যাপারে তৈরি হয় বিতর্ক। এমনকি উন্নত দেশ ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসের আইনে একে ধর্ষণ বলা হত না। কিন্তু এ নিয়ে এক নতুন সমীক্ষা চালানোর পর গবেষকরা বলছেন, হয়তো এখানে পরিবর্তন আনার সময় হয়েছে।
আর ব্রিটিশ বিজ্ঞানী ডক্টর সিওভান উইয়ার বলছেন, পুরুষকে জোর করে যৌন মিলনে বাধ্য করাকে ইংরেজিতে বলে 'ফোর্সড-টু-পেনিট্রেট' বা এফটিপি - এবং পুরুষের মনের ওপর এর প্রতিক্রিয়া হতে পারে খুবই মারাত্মক।

মজার ব্যাপার হচ্ছে,ড. উইয়ার বলছেন, তিনি দেখেছেন - পুরুষের 'ধর্ষিত হবার' গল্প অনেকে বিশ্বাস করতে চায় না।

তিনি বলেছেন, ফোর্সড-টু-পেনিট্রেট বা এফটিপি সম্পর্কে সমাজে প্রচলিত কিছু ধারণা তার গবেষণায় ভুল প্রমাণিত হয়েছে।

প্রথম ধারনা হচ্ছে:অনেকেই মনে করেন এটা অসম্ভব, কারণ পুরুষরা শারীরিকভাবে মেয়েদের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। যেটি অনেক ক্ষেত্রে সঠিক নয়, অনেক মহিলারাই আছেন যারা পুরুষদের চেয়েও অনেক শক্তিশালি, তারা ইচ্ছে করলেই পুরুষদের ওপর প্রভাব বিস্তার করতেই পারে। তাছাড়া কোন পুরুষ কোন নারীর চেয়ে শারীরিকভাবে শক্তিশালী মানেই সে ওই নারীর চেয়ে ক্ষমতাবান হবে এমনটা নয়। শারীরিকভাবে অপেক্ষাকৃত দুর্বল নারীর পক্ষেও ধর্ষণ করা সম্ভব, যদি সেই নারীটি ক্ষমতাবান হয়।

২য় ভুল ধারণা: পুরুষরা যৌন মিলনের যে কোন 'সুযোগ'কেই ইতিবাচকভাবে নিয়ে থাকে। এটিও সম্পূর্ণ ভাবে ভুল। অনেক পুরুষ ই চাপে পরে বা পরিস্থিতি শিকার হয়ে যৌন মিলনে বাধ্য হয়। এমন অনেক ঘটনা প্রায়শই নিউজে আসে যে, স্কুলে ছাত্রকে ভাল নাম্বারের লোভ দেখিয়ে যৌন নির্যাতন করেছে শিক্ষিকা। প্রমোশন এর লোভ দেখিয়ে অধনস্ত কর্মচারীর সাথে উর্ধতন কর্মকর্তার সম্পর্ক ইত্যাদি ইত্যাদি।

তৃতীয় ভুল ধারণা হচ্ছেঃ পুরুষের যৌনাঙ্গ উত্থিত বা 'ইরেকশন' হয়েছে মানেই হলো যে সে যৌন মিলন চাইছে। আসলে তা নয়। পুরুষরা ভয় পেলে বা ক্রুদ্ধ হলেও ইরেকশন ঘটতে পারে এবং তা কিছু সময় স্থায়ীও হতে পারে।

ড. উইয়ার বলছেন, "গবেষণায় আরো দেখা গেছে যে ধর্ষণের সময় নারীদের পক্ষেও যৌন সাড়া দেয়া সম্ভব, কারণ তাদের দেহ এ ক্ষেত্রে শারীরবৃত্তীয়ভাবে সাড়া দিতে পারে। ধর্ষণের শিকার হওয়া পুরুষ ও নারী - উভয়ের ক্ষেত্রেই এর স্পষ্ট প্রমাণ আছে কিন্তু এ ব্যাপারটা নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা হয় না।"



আর একটি বিষয় হচ্ছে
বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ শিরোনামে আমরা সংবাদমাধ্যম গুলোতে প্রায়ই সংবাদ প্রকাশ হতে দেখি

সাম্প্রতিক সময়ে এর সবচেয়ে আলোচিত উদাহরণ হলো রুবেল আর হ্যাপির মামলা। তাদের সম্পর্কে ইতি হওয়ার পরপরি হ্যাপি রুবেলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে আলোচনায় আসেন। সেই সময় অনেকদিন বিষয়টি আলোচনায় ও ছিলো। কিন্তু একটু ভিন্ন ভাবে বিষয় টি ভেবে দেখুন তো, যদি হ্যাপি একজন পাবলিক ফিগার হতো, আর হ্যাপি যদি সম্পর্ক বিচ্ছেদের মুল ভুমিকায় থাকতো। তাহলে রুবেল কি তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ এর মামলা দায়ের করতে পারতো?

প্রেমের সম্পর্ক জড়িয়ে নারী-পুরুষ যদি কোন প্রকার বিবাহবহির্ভুত শাররীক সম্পর্কে জড়ায় আর পুরুষটি যদি পরবর্তীতে সম্পর্ক বিচ্ছেদের ভূমিকা থাকে তাহলে দেখা যায় প্রেমিকা প্রেমিকের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের মামলা দিয়ে থাকে।
সম্পর্ক চলাকালীন দুজনেই তো দুজনের সঙ্গ উপভোগ করেছেন। তাহলে কেন এককভাবে পুরুষের ওপর দোষ চাপানো হচ্ছে?
হ্যাঁ আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে হয়তোবা আপনি বলবেন যে, বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি না দিলে তো একজন নারী শারীরিক সম্পর্কে জড়াতো না কারণ বিয়ের পূর্বে শারীরিক সম্পর্ক জড়ানো আমাদের সমাজের ট্যাবু বা অসামাজিক কর্মকাণ্ড। এখন
যেহেতু সম্পর্কে পুরুষটি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে সেহেতু তার বিরুদ্ধে শাস্তি হওয়ার জরুরী!!
এখন বড় প্রশ্ন হচ্ছে যদি সম্পর্ক বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে নারী অগ্রণী ভূমিকা পালন করে অথবা সম্পর্ক বিচ্ছেদটি যদি নারী করে থাকে তাহলে পুরুষ কেন তার বিরুদ্ধে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণ মামলা করতে পারে না?
মানে যদি ক্রিকেটার রুবেলের বিরুদ্ধে হ্যাপি বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ মামলা করতে পারে, তাহলে মডেল-অভিনেত্রী প্রভার বিরুদ্ধে কি তার প্রাক্তন প্রেমিক রাজিব বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে শারীরিক সম্পর্কের অভিযোগ এনে ধর্ষণের মামলা করতে পারবে?
পুরুষ বিদ্বেষী মনোভাব থেকেই ধরে নেওয়া হয়েছে যে শারীরিক সম্পর্ক কেবল পুরুষই উপভোগ করে এবং সম্পর্ক ভাঙলে শুধু নারীই প্রতারিত হয়!!
সম্পর্কে প্রতারিত পুরুষদেরকে প্রতিকারের সুযোগ ও ধর্ষণের শিকার পুরুষদের ধর্ষণ আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার না দেওয়ায় রাষ্ট্রীয় আইনে পুরুষ বিদ্বেষী মনোভাব স্পষ্ট।
আমাদের সমাজের অধিকাংশ মানুষ এখনো এটাই বিশ্বাস করেন যে প্রেমের ইতি পুরুষ ঘটালে সেই পুরুষ প্রতারক। আর নারি ঘটালে ইটস হার চয়েস। পুরুষ প্রেমের ইতি টানলে মামলা। মেয়ে ইতি টানলে পুরুষএর কিছু করার নেই।
শারীরিক সম্পর্ক শুধু পুরুষই উপভোগ করে না নারী ও করে তা প্রমাণের জন্য মেডিকেল সাইন্স এ বৈজ্ঞানিক হওয়ার প্রয়োজনীয়তা নেই! সাধারণভাবেই উপলব্ধি করা যায়। তবুও দুইটা ভিডিও মাধ্যমে কিছুটা ক্লিয়ার করা যেতে পারে,, ভিডিও,,,,,,

তবে সমাপ্রতিক সময়, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস ধর্ষণ নয়,এমন ঐতিহাসিক রায় দিয়েছেন ভারতের বম্বে হাইকোর্ট।উভয়ের সম্মতিতে যৌন সম্পর্ক ধর্ষণ বলে গণ্য করা যাবে না। প্রেমিকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনা একটি মামলায় এই রায় দেন বিচারপতি মৃদুলা ভাটকার।

এছাড়াও এক আবেদনে ধর্ষণ আইন লিঙ্গনিরপেক্ষ করার দাবি উঠলে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ও বিষয়টি পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে।
মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, ধর্ষণ আইন লিঙ্গ-নিরপেক্ষ করুক সংসদ।